শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৭ পূর্বাহ্ন
মোঃ জসিম উদ্দিন বিশেষ প্রতিনিধ, কক্সবাজার ঘুরে এসে, কালের খবর : পর্যটন নগরী কক্সবাজার এখন পর্যটকদের জন্য বিনোদনের মুল। খ্রিস্টানের বড়দিন ও ডিসেম্বরে টানা ছুটিতে লাখো পর্যটকে মুখরিত হয়ে উঠেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত; যেদিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। তিল ধারণের টাই নেই কোথাও। পাখি ঝাঁকের মত দু চোখ যেদিকে যাই।এরই মধ্যে সাড়ে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের প্রায় সব কক্ষই বরাদ্দ হয়ে গেছে।
কক্সবাজারের ডায়বেটিস পয়েন্ট থেকে ডলফিন মোড় সায়মন বীচ পর্যন্ত এলাকা জুড়ে লোকে লোকারণ্য। কবিতা চত্বর, শৈবাল পয়েন্ট, লাবণী পয়েন্ট, সি গাল পয়েন্ট, সুন্ধগা পয়েন্ট ও কলাতলী পয়েন্টে দুদিন ধরে সকাল ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষের ভারে যেন তিল ধারণের ঠাঁই মিলছে না।
শীতকালীন স্কুল বন্ধ,সরকারি ছুটি,ডিসেম্বরের উৎসাহকে কেন্দ্র করে এমন পরিস্থিতি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকরা সাগরের নীল জলরাশি আর বিস্তৃত বালিয়াড়ি সৈকতে ঘুরছেন নিজের মত করে। সবখানে বইছে পর্যটকদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের ঢেউ। যেন প্রকৃতির সমুদ্রের সঙ্গে জনসমুদ্রের মিলনমোহনা তৈরি হয়েছে।
সৈকতে বসানো কিটকটের কোনোটিই খালি নেই। ঘুরতে আসা পর্যটকদের কেউ ঘোড়ায়, কেউ বিচ বাইকে চড়ে; কেউ বিস্তৃত সৈকতে ঘুরাঘুরি করে, আবার কেউ সাগরজলে জেটস্কিতে আনন্দ উপভোগ করছেনা।
অনেকে যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ কাটাতে সাগরের শীতল লোনাজলে গোসলে মেতেছেন। আবার কেউ কেউ সৈকতে কিটকটে বসে উপভোগ করছেন শীতের মিষ্টি রোদের স্নিগ্ধ পরশ।
সৈকতে স্নানরত পর্যটকদের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালনকারী সি সেইফ লাইফগার্ডের সহকারী জানান , রোববার থেকে কক্সবাজারে বাড়তে থাকে পর্যটকের আগমন। সোমবার ও মঙ্গলবার তা ভরপুর হয়ে উঠেছে। হাজার হাজার পর্যটকের পদভারে মুখরিত সৈকতের বিস্তৃত এলাকা। সাগরে গোসলে নামা বিপুল সংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তা দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কক্সবাজার আবাসিক হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার জানিয়েছেন, কক্সবাজারের সাড়ে পাঁচ শতাধিক আবাসিক প্রতিষ্ঠানের সবগুলোতে ৯০ থেকে শতভাগ বুকিং রয়েছে। সে হিসেবে কক্সবাজারে গড়ে দেড় লাখের অধিক পর্যটক অবস্থান করছেন। যা জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকবে।
তিনি জানান, ভর পর্যটন মৌসুমের পাশাপাশি বিজয় দিবসের ছুটিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন ভ্রমণপিপাসু মানুষ। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় কেউ সন্তানদের, কেউ এসেছেন বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার নিয়ে। ফলে পর্যটক আগমনে ব্যবসাও ভালো হচ্ছে। সমিতির পক্ষে পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করতে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে পর্যটকের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে হয়রানি করা না হয় তার জন্য নির্দেশনা রয়েছে।
ভ্রমণে আসা ঢাকার বাংলা মোড় এলাকা থেকে আসা বিল্লাল বেপারি বলেন, কক্সবাজার খুব উপভোগ করছি। নিরাপত্তা খুবই ভাল। এখানে কোন সমস্যা হচ্ছে না ।
তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে পর্যটকদের। তবু তারা বলছেন, শীতে প্রকৃতির মোহনীয় অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগে অবসাদ কাটাতে সাগর নন্দিনী কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন। নির্বিঘ্নে ভ্রমণের উপলক্ষ উপভোগ করতে পেরে খুশি তারা। মানুষের চাপ থাকায় হয়তো একটু অতিরিক্ত অর্থ দিতে হচ্ছে।
সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে কথা হয় রাজধানীর মিরপুর থেকে আসা আজমী ফারুক নামের এক স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে। তিনি জানান, বিজয় দিবসের ছুটিতে সপরিবারে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, পাথুরে সৈকত ইনানী-পাটুয়ারটেক ঘুরেছেন নিজের মত করে। প্রকৃতি উপভোগে ক্ষণিকের জন্য ভুলে গেছেন যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল।
কুমিল্লার সরকারি কর্মকর্তা রফিকুল হুদা জানান, তাদের কয়েক বন্ধু মিলে সপরিবারে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন। তারা বুধবার সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে যাবেন। সাগর ভ্রমণে এসে বার বার মুগ্ধ হন তারা।
সন্তানদের পরীক্ষা শেষে সমুদ্র ভ্রমণে আসবেন এমন পরিকল্পনা ছিল খুলনার ব্যবসায়ী আয়াছ রহমানের। তিনি এক সপ্তাহ পর্যন্ত কক্সবাজার ভ্রমণে থাকতে চান।
তিনি বলেন, “সমুদ্র সৈকত ছাড়া মেরিন ড্রাইভ হয়ে টেকনাফ সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত যাব। দেখে আসব ঐতিহাসিক প্রেমের নিদর্শন মাথিন কূপ। চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধ পল্লিও দেখার ইচ্ছা রয়েছে।”
কক্সবাজার হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ১৬ ডিসেম্বর থেকে লাখের বেশি পর্যটক ঘুরতে এসেছেন। সাড়ে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের ৯০ শতাংশের বেশি কক্ষ বুকিং রয়েছে। আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটক আগমনের এ চিত্র অব্যাহত থাকবে।
সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানিয়েছেন, ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার শহর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে আটটি জাহাজ চলাচলের জন্য অনুমতি পেয়েছে।
“কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত মতে দুই হাজারের বেশি পর্যটক নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে কখনও তিনটি, কখনও দুটি জাহাজ দ্বীপে যাচ্ছে। বিজয় দিবস ঘিরে পর্যটকের চাপ রয়েছে। ফলে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক পর্যটক ইচ্ছা থাকার পরও দ্বীপ ভ্রমণে যেতে পারছেন না।”
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম জানান, নিরাপত্তা বলয়ে পুলিশ পর্যটকের নিরাপত্তার পাশাপাশি হয়রানি রোধে কাজ করছেন। বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযোগ বক্স স্থাপন করা হয়েছে। অভিযোগ আসলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষে ইনানী ও পাটুয়ারটেকের পাথুরে সৈকত, প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন, হিমছড়ি ঝর্ণাসহ অন্যান্য স্পটেও দায়িত্ব পালন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।